অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হোক!! যুদ্ধের বিপরীতে শ্রমজীবী ঐক্য গড়ে তুলুন

ভারত সরকার জানিয়েছে, ৭ ই মে মধ্যরাত্রে  ভারতীয় সশস্ত্র সেনা ‘অপারেশন সিঁদুর ‘ সম্পন্ন করেছে। তারা এই অপারেশনকে বর্ণনা করেছে, পাকিস্তান এবং পাক-শাসিত কাশ্মীরে  স্থিত  ‘সন্ত্রাসবাদী কাঠামো’তে ‘লক্ষ্যকেন্দ্রিক, মাপমতো এবং অ-পরিবর্ধনকামী (focused, measured and non-escalatory) একটি অভিযান হিসেবে। এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ২২ শে এপ্রিল ২০২৫ এ কাশ্মীরের প্যাহেলগামে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী আক্রমণের জবাব দেওয়া। অল্টারনেটিভ ভিউপয়েন্ট ভারত-সরকারের সন্ত্রাস-দমনের নামে বেসামরিক পাক নাগরিক হত্যার বিরুদ্ধে কড়া নিন্দা জানাচ্ছে। অ্যাডিশনাল ডিরেক্টরেট জেনারেল অব পাবলিক ইনফরমেশন, IHQ of MoD (Army), এই অন্যায্য আক্রমণকে উদযাপন করেছে, ‘সুবিচার দেওয়া হল’ (Justice served) বলে । যদিও এখনো প্যাহেলগামে  আক্রমণ চালানো সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে কোন তথ্য নেই, একজনেরও গ্রেপ্তারির সংবাদ নেই। আমাদের প্রশ্ন, শিশুসহ নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করে কোন ধরণের সুবিচার অর্জিত হল। আশ্চর্যের নয়, ভারতীয় সেনার এই গর্বিত পদক্ষেপ একমাত্র ইজরায়েল রাষ্ট্রটির দ্বারা সমর্থিত হয়েছে, যে রাষ্ট্রটির প্যালেস্টাইন ও অন্যত্র  নিরস্ত্র জনতা ও শিশুহত্যার দীর্ঘ ইতিহাস আছে।

 সংবাদে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী অপারেশন সিন্দুরের জবাবী আক্রমণে পাকিস্তানী সেনার  নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারী গোলাবর্ষণের ফলে জম্মুর পুঞ্চ সেক্টরে অন্তত ১৫ জন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছেন ।

আমরা যেকোনো প্রকার যুদ্ধ-জিগিরের বিরোধিতা করছি।  ওই অঞ্চলের মেহনতী জনতার কাছে আবেদন জানাই উভয় রাষ্ট্রের দ্বারা নির্মিত এই যুদ্ধ-উন্মাদনাকে প্রত্যাখ্যান করুন। প্রকৃতপক্ষে ভারতের পদক্ষেপ এবং পাকিস্তানের জবাবী প্রতিক্রিয়া একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবার সম্ভাবনা বহন করে, যাতে পরমাণু অস্ত্রব্যবহারের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। দুটি দেশের পরমাণু অস্ত্রনিক্ষেপ প্রতিযোগিতায়  ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি ও অপরিবর্তনীয় জলবায়ু দূষণ ঘটতে পারে যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

একটি সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে কাশ্মীরের প্যাহেলগামে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যু ঘটেছে। এই ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটির নৈতিক দায়িত্ব স্বীকার না করে ভারত-সরকার এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাড়া দেশে উৎকন্ঠা, আতংক, যুদ্ধোন্মাদনা, উগ্রজাতীয়তাবাদ এবং ইসলামোফোবিয়ার এক নতুন তরঙ্গ সৃষ্টি করেছে। গত এক পক্ষকাল জুড়ে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রতিদিন পাকিস্তান নিয়ে  নতুন নতুন গালগল্প তৈরি করা হয়েছে। মিডিয়া চ্যানেলগুলিকে যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তরিত করে সারাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে উত্তেজিত করা হয়েছে।নজিরবিহীন বেকারত্ব, অসাম্য, দারিদ্র্য এবং অন্যান্য বিভিন্ন বঞ্চনার থেকে  দেশের সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে এই নকশা নির্মাণ করা হয়েছে। সারাদেশে মকড্রিল বাড়িয়ে তুলবে পাকবিদ্বেষ এবং যুদ্ধ-উত্তেজনা, তৎসহ ইসলামোফোবিয়া।

নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা ‘ দিয়ে রেখেছেন, উদ্দেশ্য একদিকে সামরিকীকরণের  জিগির তোলা অন্যদিকে ভবিষ্যতে কোন সামরিক বিপর্যয় ঘটলে সেনাবাহিনীর ঘাড়ে তার দায় চাপিয়ে দেওয়ার জমি তৈরি করা।

আমরা গভীর লজ্জা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছি যে ভারতীয় বামেদের একাংশ সক্রিয়ভাবে ভারত-রাষ্ট্রের এই যুদ্ধ-জিগির সমর্থন করছেন। দেশের নিরাপত্তার অজুহাতে শাসকশ্রেণির কাছে এই আত্মসমর্পণ ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রসারণবাদের হাতই  শক্ত করবে, আন্তর্জাতিক ও স্বদেশ উভয় ক্ষেত্রেই আরো আগ্রাসন ঘটাতে তাকে উৎসাহ দেবে। এই পরিস্থিতিতে মিলিটারি আগ্রাসনের পক্ষে যেকোনো সমর্থন ভারতের অভ্যন্তরে ধর্মনিরপেক্ষতার সংগ্রামকে দুর্বল করবে।

অপারেশন সিঁদুর নামটি পিতৃতান্ত্রিক। নারীর উপর দখলদারি, সম্মানের জন্য হত্যা (honour killing), সতীত্ব, বিবাহের পবিত্রীকরণ এবং আরো অন্যান্য হিন্দুত্বের অনুষঙ্গ উসকে দেয়। সন্দেহাতীতভাবে এই নাম সামরিকীকরণ, উগ্র-জাতীয়তাবাদ, পিতৃতন্ত্র এবং হিন্দুত্বের বার্তা দেয়।

আমরা মনে করি যদি ভারতের সামরিক লক্ষ্য ‘সন্ত্রাসী’ এবং পাকিস্তানে স্থিত তাদের ‘ঘাঁটি’ও হয়, যুদ্ধ বা যুদ্ধ-জিগির এই সংকটের কোন সমাধান করতে পারবে না, বা যে শত্রুতার কারণে ওই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ ঘটছে তার হ্রাস ঘটাতে পারবে না।

যুদ্ধ, উগ্রজাতীয়তাবাদ এবং যুদ্ধ-প্ররোচনার মাধ্যমে সীমান্তের দুধারে থাকা অসংখ্য সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে দুটি রাষ্ট্রের শাসক শক্তি নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করবে। এই পরিস্থিতি সাম্প্রদায়িক ঘৃণা এবং মেরুকরণ  আরও গভীর করবে, যা ইতিমধ্যেই দেশে তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ফেলেছে। ভারত এবং পাকিস্তান উভয় সরকারের এই মুহূর্তে সব ধরণের সশস্ত্র শত্রুতা বন্ধ করা উচিৎ। আমরা উভয় দেশের সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানাই, এই যুদ্ধোন্মাদনা এবং সামরিকীকরণ প্রত্যাখ্যান করুন, শান্তি সংহতি এবং ঐক্যের জন্য আওয়াজ তুলুন। জনসাধারণের দাবি ও শুধুমাত্র জনসাধারণের চাপ-ই দুটি রাষ্ট্রের শাসককে অর্থপূর্ণ মতবিনিময়ের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানে বাধ্য করতে পারে।

পরিশেষে আমরা কাশ্মীরী জনতার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সর্বপ্রকার শোষণ -নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য তাঁদের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানাই।

কাশ্মীরের মেহনতী জনতার ঐক্য দীর্ঘজীবী হোক।

অল্টারনেটিভ ভিউপয়েন্ট।

Read More – To read the hindi statement click here
Read More – To read the english statement click here

More From Author

युद्ध को ना कहें! युद्ध नहीं एकता बनाएं!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *