
“রাশিয়া এবং চীন উভয়ই ইরানের সম্পদ ব্যবহার করে চলেছে। দেশের মানুষের কী হচ্ছে তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের মুনাফা নিশ্চিত করতে পারলেই হোল, শাসনব্যবস্থার ভবিতব্য কী হবে তাও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। শাসনব্যবস্থার পতন ঘটলে পলায়নপ্রয়াসী কেষ্ট বিষ্টুদের জন্য দরজা উন্মুক্ত করার কাজে তারা লাগতে পারে। ক্রুদ্ধ ইরানি নাগরিকদের থেকে পালিয়ে বাঁচার প্রয়োজন হলে শাসকগোষ্ঠীর তা প্রয়োজন হবে। সেখানে তারা একসময়ের সিরিয়ার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা আসাদের সঙ্গে চা এবং ওয়াইন পান করতে পারবে,” ফারুক সুলেহরিয়ার সঙ্গে এক লিখিত সাক্ষাৎকারে জানালেন নাসরিন পারভাজ। সাক্ষাৎকারটি এখানে হুবহু প্রকাশ করা হল।
১৯৭৯ সালে, ইসলামিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের পর একাধিক নারীবিদ্বেষী আইন প্রবর্তিত হয়। তার সমসাময়িক অনেক তরুণ-তরুণীর মতো নাসরিন পারভাজ একজন নাগরিক অধিকার কর্মী হয়ে ওঠেন। সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করেন। তবে ১৯৮২ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরবর্তীতে আট বছর কারাগারে নির্যাতন সহ্য করতে হয়।
কারাগার থেকে মুক্তির পর, তিনি ইরানে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় শুরু করেন। তবে, তিন বছর পর তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং ১৯৯৩ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন। যুক্তরাজ্যে তিনি তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান, ইরান এবং অন্যান্য দেশে, যুক্তরাজ্য সহ, বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর তুলতে থাকেন। সম্প্রতি, তিনি ২০২৫ সালের এপ্রিলে একটি টেডএক্স ইভেন্টে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।
তিনি ফ্রিডম ফ্রম টর্চার নামক কর্মশালায় তাঁর জীবন সম্পর্কে লেখার, ও গল্প লেখার দক্ষতা অর্জন করেন। তার প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে ‘ওয়ান উম্যানস স্ট্রাগল ইন ইরান: এ প্রিজন মেমোয়ার,’ যা ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বুক অ্যাওয়ার্ডসে নারী বিষয়ক বিভাগে পুরস্কার জিতেছে, এবং ‘দ্য সিক্রেট লেটার্স ফ্রম এক্স টু এ’ (ভিক্টোরিনা প্রেস, ২০১৮)। তাঁর বন্দীদশার স্মৃতিকথা স্প্যানিশ এবং জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, এবং ২০২৫ সালে আরাম ইয়ায়িনেভি তুর্কি এবং কুর্দি ভাষায় এর অনুবাদ প্রকাশ করবেন। এই সংস্করণের অনুবাদক, মাহমুত ইয়ামালাক, তুরস্কে ৩১ বছর ধরে কারাবন্দী অবস্থায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। এছাড়াও তার উপন্যাস ‘দ্য সিক্রেট লেটার্স ফ্রম এক্স টু এ’ ২০২৫ সালে আরাম ইয়ায়িনেভি তুর্কি ভাষায় প্রকাশ করবে। তার সর্বশেষ উপন্যাস ‘কফি’ ২০২৩ সালে দ্য বাথ নভেল অ্যাওয়ার্ডের জন্য লং-লিস্ট মনোনয়ন পেয়েছে। এছাড়াও তার কবিতা এবং ছোট গল্পগুলি ‘সঙস অফ ফ্রিডম—এ পোয়েট্রি অ্যান্থলজি বাই টেন ইরানিয়ান অ্যান্ড আফগান উইমেন পোয়েটস’ (আফসানা প্রেস, ২০২৪) সহ বিভিন্ন সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা দ্য গার্ডিয়ান, দ্য মর্নিং স্টার, এলবিসি, এবং হাক ম্যাগাজিন সহ বিশিষ্ট পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
তিনি ফারসি থেকে ইংরেজিতে কবিতা অনুবাদ করেছেন, যা ‘মডার্ন পোয়েট্রি ইন ট্রান্সলেশন’ এবং বিভিন্ন সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি ১৯৮৮ সালে ইরানে কারাবন্দীদের গণহত্যা – যা তিনি নিজের চোখে দেখেছেন – সম্পর্কে ফারসি ভাষায় একটি উপন্যাস লিখেছেন। তাছাড়া তার চিত্রকর্মগুলি সোথবি’স এবং ওএক্সও টাওয়ার ওয়ার্ফ সহ বিভিন্ন গ্যালারিতে প্রদর্শনীর জন্য গৃহীত হয়েছে।
তিনি মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ট্যাভিস্টক অ্যান্ড পোর্টম্যান এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টে প্রয়োগকৃত সিস্টেমিক তত্ত্বে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা লাভ করেন, সেখানে তিনি একটি পারিবারিক থেরাপিস্ট দলের সঙ্গে কাজ করেন। তিনি এক্সাইল্ড রাইটার্স ইঙ্ক (ইডব্লিউআই) এবং সোসাইটি অফ অথরস (এসওএ) এর সদস্য। বিস্তারিত তথ্যের জন্য নাসরিন পারভাজের সরকারি ওয়েবসাইট দেখুন।
গত ২৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আবার ইরানের উপর হামলা করতে পারে। আপনি কি মনে করেন ওয়াশিংটন পুনরায় আক্রমণ করতে পারে?
নাসরিন পারভাজ – এটি নির্ভর করে তারা ইরানি শাসকদের কাছ থেকে কী চায় এবং শাসকরা তা মেনে নেবে কি না তার উপর। উদাহরণস্বরূপ, যদি শাসকগোষ্ঠী মন্ত্রীদের পদত্যাগ এবং নেতৃত্ব সংস্কারের মার্কিনি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে, তবে হ্যাঁ, আমেরিকা আবার হামলা করতে পারে। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে, আমেরিকা শাহকে দেশ ছাড়তে বলেছিল এবং ফেব্রুয়ারিতে তারা খোমেইনিকে ইরানে নিয়ে আসে। অবশ্যই ১৯৭৯ সালে পশ্চিমা সরকারগুলি গুয়াদেলুপে তাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যেখানে কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাই বিশ্বের মানুষ জানত না পশ্চিমা বিশ্ব ইরানের জন্য কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে, আমরা জানি না পশ্চিমা দেশগুলির পরিকল্পনা কী। পঞ্চাশ বছর পরে ওরা ওদের নথি এবং প্রমাণ প্রকাশ করবে যে তারা ২০২৫ সালে ইরানের জন্য কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং কেন তারা অবৈধভাবে দেশটিতে বোমা হামলা শুরু করেছিল।
ইজরায়েল এবং আমেরিকা, গত ৪৬ বছর ধরে ‘ইজরায়েলের মৃত্যু চাই, আমেরিকার মৃত্যু চাই’ এই স্লোগান শুনছে, এরকম প্রথমবার ঘটছে না। পশ্চিমা বিশ্ব এই নির্দিষ্ট মুহূর্তে ইরানের সরকারের পরিবর্তন চায় কারণ তারা এখানকার সরকারের মতোই ইরানের সাধারণ মানুষের উত্থানের ভয় পায়। ইরানের জনগণের মাধ্যমে যে পরিবর্তন আসবে, তা এই অঞ্চলের অন্য অধিবাসীদের, তাঁদের দেশে পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে, তাঁদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করবে।
ইজরায়েলি-আমেরিকান বোমা হামলা যতটা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, ততটাই
জনগণের বিপ্লবী চেতনাকে হত্যা করতে চেয়ে প্রযুক্ত হয়েছে। এটি শাসনব্যবস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মীদের হত্যার মাধ্যমে শুরু করা হয় যাতে জনগণ নতুন শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কোনো কারণ খুঁজে না পান। এরকমই ঘটেছিল যখন পশ্চিমা বিশ্ব আসাদকে সিরিয়া ছাড়তে বলেছিল এবং তাঁর জায়গায় আমেরিকার ওয়ান্টেড লিস্টে থাকা আরেকজন অপরাধীকে এনে প্রতিস্থাপন করেছিল।
ইরানের ভিতরে এবং বাইরে বামপন্থীদের মধ্যে কেউ কেউ, যদিও সবাই নয়, আয়াতুল্লাহদের সমর্থন না করেও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছিল। এটি ছিল আমাদেরও অবস্থান।
নাসরিন পারভাজ – হ্যাঁ, সৌভাগ্যবশত অনেক বামপন্থী শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছিল কারণ আমরা জানতাম এর পরিণিতি কী হতে পারে। ইরান দুটি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। প্রথমত, ১৯৫৩ সালে যখন যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোসাদ্দেককে সরিয়ে শাহকে ফিরিয়ে আনে, যিনি প্রথমে ইরান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, ১৯৭৯ সালে। শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন কেবল পশ্চিমা দেশ এবং সংগঠনের শীর্ষে থাকা ব্যক্তিদের কাজে লাগে, ইরানের নাগরিকদের জন্য এই পরিবর্তন শুধু দুর্দশা নিয়ে আসে।
পশ্চিমা বিশ্ব ইরানে আরেকটি শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিকল্প হিসেবে রাজতন্ত্রকে মুখ হিসাবে তুলে ধরেছে। শাহের পুত্র ইরানে বোমা হামলা এবং নাগরিকদের হত্যার প্রশংসা করেছেন। ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা, ইজরায়েলি সরকার এবং ট্রাম্পের মতোই, নিরীহ ইরানিদের ভালমন্দ নিয়ে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই।
যেহেতু ওয়াশিংটন এবং তেল আবিব কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি, আপনি বর্তমান পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করেন? মার্কিন–ইজরায়েলি পরিকল্পনার ব্যর্থতাকে কি ইতিবাচক উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করা যায়?
নাসরিন পারভাজ – আমেরিকা এবং ইজরায়েলের পরিকল্পনার এখানেই ইতি নয়। বর্তমানে ইরানে একটি অভ্যুত্থান ধীর গতিতে ঘটছে। একটি শাসনকালের পরিবর্তন হতে চলেছে। ইজরায়েল তার হামলা শেষ করেনি এবং এখনও শাসনব্যবস্থার কর্মীদের হত্যা করছে। তারা ড্রোন ব্যবহার করে শাসনব্যবস্থার শীর্ষে থাকা সদস্যদের অ্যাপার্টমেন্ট, বাড়ি এবং গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। প্রতিটি অপরাধীর মৃত্যুর সঙ্গে, পাশের ঘরবাড়ি এবং রাস্তায় বসবাসকারী আরও নিরীহ মানুষ নিহত হয়। প্রতিদিন মানুষ আগুন দেখে এবং তারা জানে যে ইজরায়েল তাদের সমাজের অবকাঠামো ধ্বংস করছে। সরকার বলে যে এসব গ্যাস ব্যবহারের ত্রুটির কারণে হচ্ছে, বা অন্যান্য কাল্পনিক গল্প তৈরি করে সত্য লুকিয়ে রাখে। সরকার দুর্বলতা দেখাতে চায় না। পশ্চিমা বিশ্ব মুখ ঘুরিয়ে রাখে, ইরানে হত্যাকাণ্ডের কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করে না। ইরানের ভিতরে কখনো যুদ্ধবিরতি হয়নি। শুধু ইরান ইজরায়েলে বোমা হামলা বন্ধ করেছে।
মূলধারার মিডিয়া এই ইস্যুটি কভার করছে না, তবে ইরানি সূত্র প্রতিদিন চলমান নাশকতা সংক্রান্ত কার্যক্রমের রিপোর্ট করে। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েল তার কৌশল পরিবর্তন করেছে এবং সংঘাত এখনও চলছে?
নাসরিন পারভাজ – ইরান-ইজরায়েল সংঘাত নতুন নয়। ইজরায়েল বহু বছর ধরে ইরানে সামরিক কার্যক্রম এবং সরকারের বিরুদ্ধে তলে তলে নাশকতা চালিয়ে আসছে। তারা এই বছরের আগে পারমাণবিক কেন্দ্র এবং অন্যান্য স্থানে আঘাত করেছিল। এই বারের হামলার আগে ইজরায়েলের নাশকতার কয়েকটি উদাহরণ দিই।
২০২৪ সালে দুই দেশের একাধিক সরাসরি সংঘর্ষ হয়েছিল, এবং এপ্রিল ২০২৪-এ এক পর্যায়ে, ইজরায়েলি বিমান বাহিনী ইরানে একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। তারা ইসফাহানে একটি বিমানবন্দরের কাছে একটি বিমান প্রতিরক্ষা রাডার সাইটকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে নাশকতা, প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়েছিল।
এপ্রিল ২০২৪, একটি ইজরায়েলি বিমান হামলায় সিরিয়ার দামাস্কাসে ইরানি কনস্যুলেট ধ্বংস হয়, এতে ১৬ জন নিহত হয়। ইরান ইজরায়েলে মিসাইল এবং ড্রোন হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়।
৩১ জুলাই ২০২৪, হামাস নেতা হানিয়ে তেহরান সফরের সময় ইজরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন।
২৬ অক্টোবর ২০২৪, ইজরায়েল ইরানে হামলা চালায়, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং এর মিসাইল প্রোগ্রামের সাথে সম্পর্কিত স্থানগুলিতে আঘাত করে।
ইজরায়েল এখনও প্রতিদিন ইরানে ড্রোন পাঠাচ্ছে।
আপনি কি মনে করেন যুদ্ধের পর ইরানি শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়েছে, নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে?
নাসরিন পারভাজ – শাসনব্যবস্থা দুর্বল, কারণ তারা অনেক উচ্চপদস্থ কর্মীদের হারিয়েছে। ইসরায়েল-মার্কিন হামলার কারণে সরকার কোনো জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি। এটি ১৯৮০ এর দশকের মতো নয় যখন ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় মানুষ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মৃত্যুর কাফনে ফিরে আসার আগে শাসনব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল।
ইজরায়েলি বোমা হামলার আগে থেকেই মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ছিল এবং ইতিমধ্যেই ইরানে অনেক বিদ্রোহ হয়েছিল। এই যুদ্ধ মানুষকে সরকারের সমর্থনে ফেরায়নি।
ইজরায়েলি বোমা হামলার আগে ইরানে আরেকটি বিদ্রোহ গড়ে উঠছিল। ১৬৩টিরও বেশি শহরে ট্রাক চালকরা তিন সপ্তাহ ধরে ধর্মঘটে ছিলেন। তাদের মধ্যে ৪০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছিল। এটি ইরানের সবচেয়ে বড় শ্রমিক ধর্মঘটগুলির মধ্যে একটি। খাদ্য সরবরাহের অভাব—বিশেষ করে স্থানীয় মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক বেকারিগুলিতে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায়—এই ধর্মঘট সারা দেশে এক জাতীয় অভ্যুত্থানের রূপ নিতে পারত।
গত কয়েকদিনে, ইরানের ভিতরে ইজরায়েলি অপারেশন সত্ত্বেও, মানুষ বোমা হামলার শক থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং শাসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও পিকেটিং শুরু করেছে।
বিভিন্ন রিপোর্ট ইঙ্গিত দেয় যে ইরানে নিপীড়ন বেড়েছে, যেখানে ভিন্নমত পোষণকারীরা বন্দিদশা এবং কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন। এই ধরনের কার্যক্রম কী নির্দেশ করে? এটি কি ইঙ্গিত দেয় যে যুদ্ধের পর শাসন কিছুটা বৈধতা ফিরে পেয়েছে এবং এখন এটি ভিন্নমত দমন করতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করছে?
নাসরিন পারভাজ – বোমা হামলার সময়, যে বন্দীরা বছরের পর বছর ধরে জেলে ছিলেন তাদের ইজরায়েলি গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। গ্রেপ্তার এবং মৃত্যুদণ্ড ইরানে জীবনের একটি অংশ যা প্রমাণ করে যে সংগ্রাম এখনো অব্যাহত রয়েছে। এমন বন্দী আছেন যারা ২৫ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। তবে বোমা হামলার সময় গ্রেপ্তারের সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ছিল, হাজার হাজার মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে।
ইরানি জনতার আন্দোলন সম্পর্কে আরও পড়ুন : ‘যুদ্ধের ফলে ইরানি শাসনব্যবস্থা দুর্বল হলেও যুদ্ধবিরতির পর দমননীতি আরও তীব্র হয়েছে’
যুদ্ধ সবসময় মানুষকে দমন করার একটি অজুহাত ছিল এবং আছে। ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় পাঁচ হাজারেরও বেশি বন্দীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আমি যে উইংয়ে ছিলাম সেখান থেকে পঞ্চাশ জন বন্দীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তারা আর ফিরে আসেনি।
লাখ লাখ আফগানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইরান তো নিজেকে উম্মাহর প্রতি নিবেদিত প্রাণ হিসেবে দাবি করে, সেখানে দেশের মানুষ আফগানদের বহিষ্কারের ব্যাপারে কীভাবে সাড়া দিচ্ছে?
নাসরিন পারভাজ – শুধু যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা সরকারই নয়, ইসলামিক শাসনও দারিদ্র্য, চাকরির অভাব, পানির ঘাটতি এবং বিদ্যুৎ ব্যর্থতার জন্য আফগান শরণার্থীদের দায়ী করে। যুক্তরাজ্যের মতো, ইরানে কিছু মানুষ সরকারের মিথ্যা বিশ্বাস করে এবং বর্ণবাদী হয়ে আফগানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
ইজরায়েল ইরানে হামলার আগেই, শাসকগোষ্ঠী দেশে অভিবাসী-বিরোধী পরিবেশ তৈরি করেছিল যেখানে আফগানরা নিয়মিত পুলিশি সহিংসতা এবং বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছিল।
২০২৪ সালে শাসকগোষ্ঠী সকল নথিহীন আফগানদের তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ২০২৫ সালের মে মাসে শাসন ৪০ লাখেরও বেশি অভিবাসীদের গণ-বহিষ্কারের নির্দেশ দেয়। তারা তাঁদের দাসের মতো একত্রিত করে বহিষ্কার করেছে। ইরানে জন্মগ্রহণকারী বৈধ ভিসাধারী আফগানদেরও বহিষ্কার করা হয়েছে। ২০২৫ সালে দশ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁদের অনেকে গত চার দশকে ইরানে জন্মগ্রহণ করেছে এবং বেড়ে উঠেছেন। এই মানুষেরা ইরানি সমাজে সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্ত। তাদের জীবন এবং বন্ধুদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইরানি শাসন আফগান মানুষদের তাঁদের বাড়ি এবং সম্প্রদায় থেকে উৎপাটন করছে। ইরানে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের তাদের স্কুল এবং তারা যে পরিবেশে বেড়ে উঠেছে তা থেকে বের করে আফগানিস্তানে বহিষ্কার করা হচ্ছে। আফগান বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে মানুষের বাড়িতে হানা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তার করে জোরপূর্বক আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কিছু আফগান, যাদের উপর রাস্তায় তল্লাশি চালানো হয়েছিল এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে তাদের জিনিসপত্র প্যাক করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেউ কেউ তাঁদের ভাড়ার জামানত ফেরত পায়নি। তাঁদের কেবল একটি বাসে তুলে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেকে আফগানিস্তানে কোনো টাকা, খাবার বা আশ্রয় ছাড়াই পৌঁছেছে।
বহিষ্কৃত নারী, মেয়ে, কর্মী এবং সাংবাদিকরা তালেবানের হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উচ্চ ঝুঁকির মুখোমুখি। নারী এবং মেয়েদের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ অপেক্ষা করছে। মেয়েরা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অধিকার না থাকায় খুবই বিচলিত।
ইরানে আফগানদের সর্বনিম্ন শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। শাসকগোষ্ঠী আফগানদের উপর তাদের আক্রমণকে ন্যায্যতা দেয় এই অভিযোগে যে তারা ‘ইরানে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য মোসাদের সাথে সহযোগিতা করছে।’ ইজরায়েল যে শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে তাদের ঠিকানা আদতে আফগানদের নাগালের বাইরে।
আফগানরা ইরানি শ্রমিকদের তুলনায় কম বেতন পান। ইরানে, বিশেষ করে তেহরানে, সম্প্রতি নির্মিত বেশিরভাগ ভবন আফগানদের দ্বারা তৈরি। তবুও কিছু মানুষ শাসকের প্রচারণায় মগজ ধোলাই হয়ে আফগানদের তাদের নিজেদের আর্থিক সমস্যার জন্য দায়ী করে এবং তাঁদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। বছরের পর বছর ধরে আফগানদের নির্দিষ্ট শহর বা এলাকায় যাওয়ার অধিকার ছিল না। তাঁরা শাসকগোষ্ঠী এবং কিছু নাগরিকের কাছ থেকে ভয়ানক বৈষম্য, অপমান, দুর্ব্যবহার এবং অবিচারের সম্মুখীন হয়েছেন। অনেকে সহিংসতা, আটক এবং নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন।
শুধু ইজরায়েলই ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়ি থেকে উৎখাত করে না। ইরানি শাসনব্যবস্থা আফগানদের সাথে একই কাজ করছে কিন্তু পার্থক্য হলো ইজরায়েলের মতো ইসলামিক শাসকেগোষ্ঠী আফগানদের উপর বোমা ফেলে না। ইজরায়েলি হামলার পর শাসকেগোষ্ঠী এমন আচরণ করছে যা আহত কোন এক পশু ক্রোধের বশবর্তী হয়ে করে থাকে এবং মাত্র কয়েক সপ্তাহে পাঁচ লাখেরও বেশি আফগানকে ইরান বহিষ্কার করেছে।
এটি সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় বলপূর্বক উৎখাত। ইজরায়েলের বোমা হামলা ইরানে আফগান-বিরোধী পরজাতি-বিদ্বেষ (Xenophobia) বাড়িয়েছে। দারিদ্র্য এবং বর্তমান অভিবাসী-বিরোধী নীতি কিছু মানুষের মধ্যে সহানুভূতি ও সহমর্মিতার বোধকে নিকেশ করে ফেলেছে। দুর্ভাগ্যবশত, বহু মানুষ আফগানদের সমর্থন করেন না। তাঁরা শাসকের প্রচারণায় বিশ্বাস করেছে যে আফগানরা ইজরায়েলি গুপ্তচর। আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্লিপ দেখেছি যেখানে বহিষ্কারের অপেক্ষায় থাকা আফগানদের পানি এবং খাবার ছাড়া জেলে আটক রাখা হয়েছে। তাদের শিশুদের জন্য বেবি ফুডের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়াই তাদের দেখভাল করতে বাধ্য করা হয়েছে। কিছু স্থানীয় মানুষ বেবি মিল্ক, ন্যাপি, রুটি এবং পানি নিয়ে এসেছিল। তারা এই জিনিসগুলি আটক আফগানদের কাছে তাদের খাঁচার দরজার নিচ দিয়ে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল।
আফগানিস্তানে এই বন্দীদের অনেকেরই জীবন রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদের বেদনাদায়ক স্মৃতি এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শেষ হবে। ওরা ওদের তৈরি সবকিছু ফেলে চলে গেছে এবং শূন্য থেকে শুরু করতে গেলে ওদের কাছে সাহস আর আশা ছাড়া আর কিছু নেই। আফগান নারীদের এমন একটি ব্যবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যেখানে নারী হওয়ার জন্য ঘেন্নার স্বীকার হতে হয়। একক নারীদের পুরুষ অভিভাবকের অভাবে আশ্রয় দেওয়া হয় না। তাদের নরকে বহিষ্কার করা হচ্ছে।
প্রত্যেকে নিরাপত্তা এবং মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য, তারা যে দেশ থেকেই আসুন না কেন। সমষ্টিগত বহিষ্কার অবৈধ, এই চুক্তিতে ইরান স্বাক্ষর করেছে। তবুও জবরদস্তি বহিষ্কার একটি রাষ্ট্রীয় নীতি। কারুর কাছে নিশ্চিত আশ্রয় নেই। কোনো প্রক্রিয়াই ন্যায়নীতির ধার ধারছে না।
ইজরায়েলের মতো একটি ইউরোপীয় শাসনব্যবস্থা আজ ফিলিস্তিনে মানুষের সাথে যে আচরণ করছে, ইরানের ইসলামিক শাসনব্যবস্থা একই কাজ করলে তার নিন্দা কেন করা যাবে না?
২০২১ সালে পশ্চিমা সরকারগুলি তালেবানকে ক্ষমতায় হস্তান্তর করায় প্রচুর আফগানরা আশেপাশের দেশগুলিতে আশ্রয় চেয়েছিল। হাজার হাজার নারী এবং শিশু তালেবানদের থেকে পালিয়ে ইরানে শরণার্থী হিসেবে এসেছিল।
ইউরোপ অতীতে বলেছিল যে আফগানরা ইরানে নিরাপদ থাকবে এবং তাদের আঞ্চলিকভাবে সুরক্ষা দেওয়া উচিত। আর এখন দেখুন। তারা ইসলামিক শাসন এবং তালেবানের হাতে খুবই নিরাপদ যা সবাই দেখতে পাচ্ছে।
যে পশ্চিমা সরকারগুলি আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে পুনস্থাপন করেছে, তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তারা আফগানিস্তানের অর্ধেক জনসংখ্যা, অর্থাৎ নারীদের, কারাবন্দী করে রেখেছে। আফগান নারীদের লিঙ্গবৈষম্যমূলক বিভাজন (gender apartheid) স্বীকার। তাদের আশ্রয়ের অধিকার অবশ্যই দিতে হবে। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যমূলক বিভাজন কোথাও স্বীকৃত নয়, বিশেষ করে ইরানে তো নয়ই, কারণ এই দেশটিও লিঙ্গবৈষম্যমূলক বিভাজন করে। আফগানিস্তানে নারীরা ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং তাঁদের সেখানে বহিষ্কার করা উচিত নয়, কিন্তু কেউই এ ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করেন না।
পশ্চিমা দেশগুলির সরকার আফগানিস্তানের নারীদের কী অবস্থায় ফেলেছে এই ব্যাপারে সেই সব দেশের নারীদের স্পষ্ট বোঝা উচিত। তাদের আফগানিস্তানের নারীদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত এবং আফগানিস্তানের মতো দেশে লিঙ্গবৈষম্যমূলক বিভাজনের শিকার নারীদের জন্য নারী শরণার্থী অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করা উচিত।
যে পশ্চিমা সরকারগুলি তালেবানকে ক্ষমতায় বসিয়েছে তারা আফগান জনগণের কাছে ঋণী। তাদের মানবিক ভিসা এবং ইরান থেকে মহিলা আফগান এবং তাদের পরিবারের জন্য নিরাপদ নিষ্ক্রমণের পথ দেওয়া উচিত, যাতে তারা তালেবানের হাত থেকে বাঁচতে পারে।
ইরানি শাসনব্যবস্থা কেন ইসলামের নামে ফিলিস্তিনিদের জন্য চিন্তিত কিন্তু আফগানদের জন্য নয়। ইরানের মানুষ কি এই দ্বৈতসত্তা ধরতে পারে?
নাসরিন পারভাজ – আমি বিশ্বাস করি না যে ইসলামিক শাসন ফিলিস্তিনিদের জন্য চিন্তিত। যখন তারা ফিলিস্তিন বলে তখন তারা আসলে হামাসের কথা বলে। তারা কেবল হামাসকে সমর্থন করে, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করার দাবি করে। ইরানের বহু মানুষ এই সত্য জানে না এবং শাসকরা যা বলে তাই বিশ্বাস করে। তারা মনে করে শাসকেরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করছে। যেহেতু ইরানের মানুষকে দরিদ্র করে রাখা হয়েছে, কেউ কেউ শাসককে তাদের জন্য বরাদ্দ অর্থ ফিলিস্তিনিদের দিয়ে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে এবং তারা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ক্ষোভ পোষণ করে।
বহু মানুষ বুঝতেই পারে না যে শাসকেরা তাদের অধিকার লঙ্ঘন করছে বরং শাসকের নির্দেশে অন্যদের দোষারোপ করে।
আসাদ শাসনকালের জমানা শেষ। হিজবুল্লাহ দুর্বল। কিছু বিশ্লেষকের মতে, ইরাকে তেহরানের প্রভাব কমছে। পরিবর্তিত আঞ্চলিক পরিস্থিতি শাসকগোষ্ঠীর ভবিষ্যতের ওপর কী প্রভাব ফেলবে?
নাসরিন পারভাজ – দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্ব মধ্যপ্রাচ্যকে পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমা সরকারগুলি বহু বছর ধরে ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইরাক যুদ্ধের ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য যে মিথ্যা বলা হয়েছিল তা যেমন পরে উন্মোচিত হয়েছিল, ইরানের উপর এই অবৈধ হামলার ক্ষেত্রেও একই হবে।
ইজরায়েল ২০১২ সাল থেকেই বিশ্বকে বলছে যে ইরান কয়েক মাসের মধ্যে পারমাণবিক বোমা হাতে পাবে। কোনো একটা কারণে তারা মনে করে এখনই ইরানে হামলার সঠিক সময়। আমরা বর্তমান সময়ের মানুষ এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করতে পারি না। আমরা ১৯৫৩ সালে বাস করছি না যখন পশ্চিমা বিশ্ব একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইরানের ইতিহাস পরিবর্তন করতে পেরেছিল। ইরানি জনসংখ্যা, বিশেষ করে নারীরা, শিক্ষিত এবং দেশকে ভালোর দিকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে, পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে চায় সেভাবে নয়। মানুষ আরও ভালো জীবনের যোগ্য। তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে শিশুশ্রমিক বা গৃহহীন শিশুদের দেখতে চায় না। মানুষ বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায় এবং বেকারত্ব ভাতা এবং আরও অধিকার পেতে চায় যা তাদের জীবনকে উন্নত করে।
আমি আশা করি পশ্চিমা বিশ্ব ইরানি শাসনব্যবস্থাকে কোন একটি পুতুলের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করতে সফল হবে না। আমি আশা করি মানুষ তাদের নিজের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
চীন এবং রাশিয়া ইজরায়েল–মার্কিন যুদ্ধের সময় তেহরানকে কোনো উল্লেখযোগ্য সমর্থন দেয়নি। এমনকি কূটনৈতিক সমর্থনও তেমন কিছু দেয়নি। কেন?
নাসরিন পারভাজ – এই সরকারগুলি তাদের নিজেদের মানুষকে শোষণ করার মতোই অন্য দেশগুলিকে শোষণ করে। রাশিয়া এবং চীন উভয়ই ইরানের সম্পদ ব্যবহার করে চলেছে। দেশের মানুষের কী হচ্ছে তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের মুনাফা নিশ্চিত করতে পারলেই হোল, শাসনব্যবস্থার ভবিতব্য কী হবে তাও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। শাসনব্যবস্থার পতন ঘটলে পলায়নপ্রয়াসী কেষ্ট বিষ্টুদের জন্য দরজা উন্মুক্ত করার কাজে তারা লাগতে পারে। ক্রুদ্ধ ইরানি নাগরিকদের থেকে পালিয়ে বাঁচার প্রয়োজন হলে শাসকগোষ্ঠীর তা প্রয়োজন হবে। সেখানে তারা একসময়ের সিরিয়ার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা আসাদের সঙ্গে চা এবং ওয়াইন পান করতে পারবে
মার্কিন–ইজরায়েলি আক্রমণের সময় বামপন্থীদের একটি অংশ আয়াতুল্লাহ শাসনব্যবস্থাকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার শেষ স্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। ধর্মতান্ত্রিক ইরানি শাসনব্যবস্থাকে সাম্রাজ্যবাদী–বিরোধী হিসেবে ব্র্যান্ড করার বামপন্থী প্রচেষ্টার ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
নাসরিন পারভাজ – একজন ব্যক্তি নিজেকে কীভাবে দেখে বা তা তারা কী বলে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল তারা কী করছে বা করতে চায়। তুদেহ পার্টির মতো তারা শাসকপন্থী। তারা মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল এবং শাসকের ‘আমেরিকার মৃত্যু চাই, ইসরায়েলের মৃত্যু চাই’ স্লোগানের অজুহাত দিয়ে শাসনব্যবস্থার পাশে দাঁড়িয়েছিল। শাসকের আরেকটি স্লোগান ছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে, কিন্তু সময়ের সাথে তারা বুঝতে পেরেছে যে রাশিয়ার উপর নির্ভর করা লাভজনক। এই দলগুলিও নিজেদের বামপন্থী বলে, কিন্তু তারা সবসময় ডানপন্থী সংগঠনের মতো কাজ করে। আমার কাছে একটি বামপন্থী দল হল তারাই, যারা মানুষের পাশে দাঁড়ায়, কোনো ক্ষমতার পাশে নয়। দুর্ভাগ্যবশত কিছু ইউরোপীয় দল যারা নিজেদের বামপন্থী বলে, তারা আমেরিকা এবং ইজরায়েলের বিরুদ্ধে শাসকের স্লোগানে ভুলে ইসলামিক শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করে। তারা গত ৪৬ বছর ধরে শাসনব্যবস্থার হাতে নিপীড়িত ইরানিদের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তারা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার পাশে দাঁড়াতে অভ্যস্ত।
২০২২ সালের নারী জীবন-স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়, এই বামপন্থী দলগুলির কোনো কোনোটি শাসকদের বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রামকে সমর্থন করেনি। তাদের কেউ কেউ এতটাই বিভ্রান্ত ছিল যে তারা বলেছিল এই আন্দোলন নির্ঘাত আমেরিকা দ্বারা সংগঠিত হয়েছে। তারা তখনো শাসকদের পাশে দাঁড়িয়েছিল যখন স্কুলের মেয়েদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, ধর্ষণ করা হয়েছিল এবং তাদের দেহ রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
অনুবাদ – পিয়া সরকার