বুধবার (২১ শে মে, ২০২৫) একটি “নকশাল বিরোধী” অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর জেলায় নিষিদ্ধ ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওইস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও (যিনি বাসবরাজ নামেও পরিচিত) কে খুন করেছে। খুন করেছে ওই সংগঠনের আরো ২৭ জন সদস্যকে। অপারেশন কাগারের এই ‘সাফল্যে’ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উচ্ছসিত গর্ব প্রকাশ করেছেন।
অল্টারনেটিভ ভিউপয়েন্ট এই পরিকল্পিত ঘৃণ্য হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা করছে। ছত্তিশগড়ের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জমি, জল এবং বন দখলের লক্ষ্যে এক দীর্ঘকালীন রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা এই গণহত্যার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য, যাকে মাও-বিরোধী অভিযানের আড়ালে স্থাপন করে কর্পোরেটের স্বার্থ পরিপূরণ করা হচ্ছে। ভারতীয় মাওবাদী আন্দোলন প্রাথমিকভাবে স্বভূমি থেকে উচ্ছেদের প্রতিক্রিয়া হিসাবে সংগঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে বনাঞ্চল ও বনাঞ্চলবাসীর বিচ্ছিন্নকরণের লাগাতার বিরোধিতার মধ্য দিয়ে একটি বৃহত্তর আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্র এই প্রতিরোধ দমন করতে অসংখ্য গণহত্যা ঘটিয়েছে। ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের জন্য দেশজোড়া রাষ্ট্র-পীড়নের এক অন্যতম শিকার।
সরকার তার নিজ নাগরিকদের রক্তে হাত রক্তাক্ত করছে, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের নজরদারিতে ঘটা এই হত্যাকাণ্ড উপভোগ করছেন। “অপারেশন কাগার” শুরু হওয়ার পর থেকে মাত্র ২১ দিনে ১৫ জন মহিলা সহ ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে ছত্তিশগড় জুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনকে স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছে।
একথা অনস্বীকার্য মাওবাদীরা আদিবাসীদের মর্যাদা ও এজেন্সি সম্পর্কিত বিষয়গুলির পাশাপাশি স্থানীয় দারিদ্র্য, শোষণ, কর্পোরেশন দখল এবং জমি ও জীবিকা হারানো অঞ্চলগুলির সংগ্রামের সাথে যুক্ত। এটি কোন সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা জনিত সমস্যা নয়। বহুধা বিস্তৃত বঞ্চনা শোষণ ও বিচ্ছিন্নতার দ্বারা নিপীড়িত ভূমিজ মানুষের আর্তনাদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০২৬ সালের ৩১শে মার্চের মধ্যে ‘নকশাল নির্মূলের’ সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। নাগরিকদের প্রতি এই সহিংস বর্জনবাদী মনোভাব সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ এবং তারপর তাকে নির্মূল করার দৃষ্টিভঙ্গিকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মান্যতা দেয়, যা গণতন্ত্রের জন্য প্রবল উদ্বেগজনক।
সিপিআই (মাওবাদী)-এর পক্ষ থেকে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব সত্ত্বেও সরকার তার দমন-পীড়ন বন্ধ করার কোন সদিচ্ছা দেখায়নি,বরং মাত্রা বাড়িয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের উদ্দেশ্যে আদিবাসী জনজাতির হত্যার ঐতিহাসিক শিকড় অনেক গভীরে। কংগ্রেস সরকারের ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট ‘এর নীল-নকশা প্রস্তুত করেছিল। কিন্তু বর্তমানে মোদী-শাহ সরকার দমন-পীড়নের অঘটিত-পূর্ব নজির সৃষ্টি করছে। “অপারেশন কাগার” এই ধারাবাহিক হিংসার নৃশংসতম প্রকাশ।
রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্য রেখেও অল্টারনেটিভ ভিউপয়েন্ট সিপিআই (মাওইস্ট) সদস্য এবং আদিবাসী জনগণের নির্বিচার ও অমানবিক হত্যা ও যে অগণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ এই হত্যাকে সম্ভবপর করে তুলছে, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আদিবাসী জনজাতিদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র যে যুদ্ধ চালাচ্ছে , আমরা তার বিরুদ্ধে। প্রতিটি রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও হত্যা প্রতিহত করতে আমরা গণতান্ত্রিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই।