
নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রাথমিক নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয় একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে—বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে কট্টর ডানপন্থীরাজনীতির প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে। এই নির্বাচন শুধুমাত্র তথাকথিত পুঁজিবাদী বিশ্বের আর্থিক রাজধানী নিউ ইয়র্কের পাঁচটি বরোর মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়া স্বত্তেও মামদানির সম্ভাব্য জয়ের প্রভাব শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহু দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে মামদানির প্রচারণা শহরের শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে একটি ইতিবাচকও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে—যেখানে নিউ ইয়র্ক শহর শাসিত হবে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে কেন্দ্র করে, কর্পোরেট স্বার্থে নয়।
নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রাইমারিতে, জোহারন মামদানির জয় একটি তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক মোড় নিয়ে আসার সম্ভাবনা বহন করে—বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ গোটা বিশ্বজুড়ে চরম ডানপন্থী রাজনীতির প্রভাব তীব্রতর হচ্ছে । যদিও এই নির্বাচন শুধুমাত্র পুঁজিবাদী বিশ্বের আর্থিক রাজধানী নিউ ইয়র্ক শহরের পাঁচটি বোরো বা এলাকায় সীমাবদ্ধ, তবুও মামদানির সম্ভাব্য মেয়রপদ জয় এর প্রভাব শহরের সীমা ছাড়িয়ে জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও পড়তে পারে। তাঁর ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট প্রচারাভিযান শহরের শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল এক কর্মসূচি তুলে ধরে: নিউ ইয়র্ক শহর চলবে সেইসব মানুষের স্বার্থে, যারা প্রকৃত অর্থে শহরের চালিকাশক্তি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে চরমপন্থী ডানদের যে আগ্রাসী উত্থান গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রবল প্রতিক্রিয়াশীল আবহে ঠেলে দিচ্ছে। মূলধারার ডেমোক্র্যাটরাও এই স্রোতের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অপারগ। এহেন প্রেক্ষাপটে মামদানির জয় আমেরিকান বামপন্থীদেরপক্ষে উল্লেখযোগ্য অর্জন। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, আবাসন সংকট, পুলিশী বর্বরতা এবং পরিবেশগত বিপর্যয়েরক্লিষ্ট সময়ে মামদানি নিপীড়িত শ্রমজীবী মানুষের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষাকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে তাঁদের প্রতিনিধি হতে চাইছেন।
সিটি হল পর্যন্ত পথ: লড়াইয়ের প্রচার ,শুধু দেখনদারি নয়
উগান্ডান-মার্কিন সন্তান জোহারন মামদানি, প্রখ্যাত চিন্তাবিদ মাহমুদ মামদানি ও প্রখ্যাত তথ্যচিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের পুত্র, নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে কুইন্স-এর প্রতিনিধি হিসেবেও পরিচিত। তিনি ডেমোক্রেটিকসোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকা (DSA)-র একজন সক্রিয় সদস্য। তীব্র ডানপন্থী আক্রমণ ও নিষ্প্রাণ ডেমোক্র্যাটিক প্রতিপক্ষ মোকাবিলা করে তিনি পরিচয় ও খ্যাতির রাজনীতিকে ছাপিয়ে —মাটির কাছাকাছি থাকা শ্রমজীবী মানুষের দাবি-দাওয়াকে স্থাপন করেছেন তাঁর প্রচারের কেন্দ্রে।
যেখানে তাঁর ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীরা মূলত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, স্টার্টআপ উদ্যোগ, ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন, সেখানে মামদানি স্পষ্টভাবে দাঁড়িয়েছেন ভাড়াটে, ট্রানজিট কর্মী, গিগ কর্মী ও বেকার মানুষের পাশে। তাঁর নির্বাচনী বার্তা ছিল স্পষ্ট—এমন একটি শহর চাই, যেখানে শাসন করবে শ্রমজীবীজনগণ, কোটিপতি বা বাড়িমালিকেরা নয়।
তাঁর প্রচার মূলত কেন্দ্রীভূত ছিল নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর:
১. সাশ্রয়ী আবাসনের ব্যবস্থা ও ভাড়াবৃদ্ধির উপর অবিলম্বে স্থগিতাদেশ — গত কয়েক মাসে নিউ ইয়র্ক সিটিতে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এই গুরুতর সমস্যাটি বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসকার্যত উপেক্ষা করেছেন। অ্যাডামসের কুখ্যাত উক্তি , “আমি নিজেই রিয়েল এস্টেট।” মনে রাখতে হবে।দুর্নীতি ও ঘুষ নেওয়ার একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত অ্যাডামস, বাস্তবে বাড়ির মালিকদের স্বার্থেই কাজ করছেন বলে অনেকে মনে করেন। একইসঙ্গে, আরেক প্রধান প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমো — যিনি অতীতে ভাড়াটিয়াসুরক্ষা আইনগুলোর বিরোধিতা করেছেন এবং বাড়িওয়ালাদের সমর্থন পেয়েছেন —স্বভাবতই শ্রমজীবী মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন পাননি।
এর ঠিক বিপরীতে, জোহারন মামদানি সাশ্রয়ী আবাসন এবং অবিলম্বে ভাড়া বৃদ্ধির ওপর স্থগিতাদেশ জারির দাবিকে তার নির্বাচনী প্রচারের মূল কণ্ঠস্বরে পরিণত করেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ভাড়াটিয়াদেরঅধিকার নিয়ে সরব থেকেছেন। তাঁর প্রস্তাব ছিল শহরের দুঃসহ আবাসন সংকটের মোকাবিলায় ২ লক্ষ সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণ এবং ভাড়ায় স্থিতিশীলতা আনতে আপাতত ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ রাখা।
এক্সিট পোলগুলি আগাম বলেছিল, এবারের নির্বাচনে নিউ ইয়র্কবাসীর প্রধান উদ্বেগ বাড়তি ভাড়ার চাপ। বাড়িওয়ালাদের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হচ্ছিল — “ভাড়া না বাড়ালে সম্পত্তির দাম ধরে রাখা যাবে না” — সাধারণ মানুষ সে যুক্তি নাকচ করেছেন। শহরের নানা শ্রমজীবী মহল্লা থেকে নানা পেশার মানুষ মামদানিরপ্রস্তাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তবে এই জয় সহজে আসেনি। বাড়িওয়ালা-পৃষ্ঠপোষক সংগঠনগুলো অ্যান্ড্রু কুয়োমোর পেছনে বিপুল টাকা ঢেলেছে। আবাসন অধিকার কর্মীরা বলছেন, “রিয়েল এস্টেট লবিগুলো কুয়োমোর মতো কলঙ্কিত প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে।” নির্বাচনের শেষ দিককার সপ্তাহগুলোতে নিউ ইয়র্ক অ্যাপার্টমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কুয়োমোকে সমর্থন করে $২৫ লক্ষের বেশি একটি সুপার প্যাকেজ অনুদান দিয়েছে। আরও জানা যাচ্ছে, বিশাল সম্পত্তির মালিক ডারস্ট অর্গানাইজেশনের ডগলাস ডারস্ট এবং আইন লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত A&E রিয়েল এস্টেটের ডগলাস আইজেনবার্গও কুয়োমোকে বড় অঙ্কের অনুদান দিয়েছেন। প্রাক্তন মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ, মেয়র থাকাকালীন যিনি ভাড়া-নিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্টগুলোর ভাড়া ৩৩% বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তিনিও কুয়োমোর প্রচারণায় $৮.৩ মিলিয়ন দিয়েছেন।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আর প্রভাবশালীদের স্পষ্ট সমর্থন সত্ত্বেও , শ্রমিক সংগঠন ও সমাজতান্ত্রিকআন্দোলনের শক্তি নির্বাচনে বড় ভূমিকা রেখেছে। মামদানির প্রচারই হয়ে উঠেছিল প্রতিরোধের প্রতীক, এক শক্তিশালী অবস্থান–– রিয়েল এস্টেট পুঁজির একচেটিয়া শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর তাকৎ নিয়ে।
জনগণের স্বার্থবিরোধী বাড়িওয়ালা-প্রভাবিত রাজনীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের জন্য মামদানির প্রশংসা প্রাপ্য ।
২. পরিবেশবান্ধব ও জনগণের পকেট-বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা
সেনেটর জেরেমি স্যান্ডার্সের সঙ্গে অংশ নেওয়া এক র্যালিতে মামদানি বলেন, “সরকারকে এমন এক সমৃদ্ধির নীতি গ্রহণ করতে হবে যেখানে ৯৯ শতাংশ মানুষের প্রাধান্য থাকবে, এক শতাংশ ধনী শ্রেণির নয়।”
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে গরমের তীব্রতা বিপদজনকভাবে বাড়ছে—প্রচণ্ড তাপদাহে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই জীবনরক্ষাকারী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র অফিস জানাচ্ছে, শহরের ৩০% মানুষই বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছেন না।
মামদানি বলেন, এই অবস্থার জন্য দায়ী মূলত পুঁজিবাদী লোভ। তিনি বড় ধরনের সরকারি বিনিয়োগেরমাধ্যমে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে কার্বন নির্গমন কমানোর কথা বলেন। তাঁর প্রস্তাব ছিল—বাসের ভাড়া সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে করের মাধ্যমে তার খরচ চালানো হোক,যাতে সবাই তা ব্যবহার করতে পারে।
এই প্রস্তাবে বিরোধীরা বেজায় ক্ষিপ্ত হলেও বাস্তব বলছে, মানুষ খরচের নাগালের মধ্যে পেলে গণপরিবহনইব্যবহার করবন। ফলে, তাঁর প্রচারের সময়ই বাস যাত্রীর সংখ্যা ১৪% এবং মোট যাত্রার সংখ্যা ৩০-৩৮% পর্যন্ত বেড়েছে।
ভাড়ার চাপে শহরের মূল অংশ ছেড়ে বহু নিম্নবিত্ত মানুষ শহরের প্রান্তে চলে গেছেন। ফলে তাঁদের জন্য সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই মানুষদের একটা বড় অংশ আফ্রো-আমেরিকান ও হিস্পানিক। তাঁদের সমর্থনই মামদানির শক্তিশালী ভোটব্যাংক তৈরি করেছে।
৩. সার্বজনীন শিশুযত্ন ও স্বাস্থ্যসেবা – কোভিড-১৯ মহামারি আমেরিকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভয়াবহ ব্যর্থতা নির্মমভাবে উন্মোচিত করে দিয়েছিল। নিউ ইয়র্ক সিটি ছিল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম —৫৫,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। বেসরকারি বিমার উপর নির্ভরশীলতা সমাজের দুর্বল ও প্রান্তিক মানুষদের সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হয়।
মামদানি এমন স্বাস্থ্যব্যবস্থার পক্ষে সওয়াল করেছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে যা ভর্তুকিপ্রাপ্ত হবে। ধনীদের উপর উচ্চ কর আরোপ করে সেই ভর্তুকি দেওয়া হবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের বেসরকারি স্বাস্থ্যবিমার উপর নির্ভরতা কমবে। পাশাপাশি তিনি কর্মজীবী অভিভাবকদের সহায়তার জন্য সার্বজনীন শিশুদেখভাল প্রকল্প চালুর প্রস্তাব দেন, যার আওতায় থাকবে বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক পরিচর্যা। এর ফলে তরুণ পিতামাতারা নিশ্চিন্ত মনে কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন, কারণ তাঁদের সন্তানের যত্নের নিশ্চয়তা থাকবে।
এই দাবিগুলি কেবল তাত্ত্বিক নয়, বরং সাধারণ মানুষের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে এসেছে। নির্বাচনের ফলাফল দেখিয়েছে—মানুষ বড় ধরনের সংস্কারের জন্য প্রস্তুত এবং তাঁরা আর বাজারমুখী আপসেররাজনীতি সহ্য করতে চান না।
৪. ইসরায়েল–প্যালেস্টাইন সংকটের মানবিক সমাধান – সাম্প্রতিক ইসরায়েলি আগ্রাসনকে অনেকেই“লাইভ-স্ট্রিমড গণহত্যা” বলে আখ্যা দিয়েছেন, যার পেছনে আছে মার্কিন সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থন। এর প্রতিবাদে গোটা আমেরিকাজুড়ে বিশাল আন্দোলন শুরু হয়। ট্রাম্প প্রশাসনসহ একের পর এক সরকার এই আন্দোলনকারীদের প্রতি দমনমূলক মনোভাব দেখিয়েছে এবং দেশজুড়ে নতুনভাবে ইসলামোফোবিয়া ছড়ানোহয়েছে। মূলধারার গণমাধ্যম এই প্রতিবাদকে ‘ওয়োক কালচার’-এর নাম দিয়ে বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গিতে খাটো করার চেষ্টা করলেও লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্যালেস্টাইনের পক্ষে ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছেন। এই সংহতিজ্ঞাপন নিঃসন্দেহে এক শাসকবিরোধী গণআন্দোলন।
মামদানি নিপীড়িতদের পক্ষের কণ্ঠস্বর বহন করেছেন।তাঁর মতে যুদ্ধবিরতির দাবি কোনও উগ্র রাজনীতি নয়, বরং শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের পক্ষে এক নৈতিক অবস্থান। “গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা” জাতীয় স্লোগানেরপ্রেক্ষিতে তিনি মানুষকে শুধু স্লোগানে নয়, বরং মানবাধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর এই স্পষ্ট অবস্থান আরব, মুসলিম ও শান্তিকামী ভোটারদের মধ্যে জোরালো সমর্থন পেয়েছে।
নিউ ইয়র্ক সিটির পাঁচটি বরোতেই প্রায় ১০ লাখ ইহুদি বাসিন্দা থাকায়, সাম্প্রতিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে “অ্যান্টিসেমিটিজম” এক বড় ইস্যু ছিল। মামদানির বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের কোনও প্রমাণ নেই, তবুও তাঁর মেয়র পদপ্রার্থিতাকে ঘিরে ইসরায়েলপন্থী রাজনৈতিক মহল গভীরভাবে আতঙ্কিত। কিন্তু প্রকৃত ইস্যুটা অ্যান্টিসেমিটিজম নয়—বরং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের প্রতি ক্রমহ্রাসমান সমর্থনকে ইচ্ছাকৃতভাবে “ইহুদি-বিদ্বেষ” বলে বদনাম করার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে।
মিথভঙ্গ : প্রচারের চালু ধরনের বদলে তৃণস্তরে সংগঠনের জয়
কয়েকটি কারণ জোহরান মামদানি-র বিজয়ে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল—সোশ্যাল মিডিয়ায় খেলা আর বিজ্ঞাপন বা ঝাঁ-চকচকে স্লোগানকে অযথা মহিমান্বিত না করে মাটির কাছাকাছি, মানুষের ভিতর থেকে আসল রাজনৈতিক লড়াইকে সম্মান দেওয়া। সিটি হলের দিকে জোহরান মামদানি-র পদযাত্রা ছিল এই তৃণস্তর ভিত্তিক আন্দোলনেরই প্রতিফলন।
মামদানি-র বিজয় সাধারণ মানুষের পক্ষে আশাবাদের এক নতুন দিগন্ত। এতে বোঝা যায়, সত্যিকারেরগণআন্দোলন পুঁজির ক্ষমতা, কর্পোরেট মিডিয়ার প্রভাব, এবং ভয়ের সংস্কৃতিকে পরাজিত করতে পারে। সেদিক থেকে দেখলে এই বিজয় ঐতিহাসিক।এর রাজনৈতিক তাৎপর্য বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
পুঁজিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের ক্ষোভ
২০২৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অকস্মাৎ রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন গোটা দেশের রাজনৈতিক আবহ বদলে দিয়েছে। মূলধারার মিডিয়া এমন ভাব করছে যেন মাত্র দুটি পথ খোলা—একদিকে ট্রাম্পের স্বৈরশাসন, আরেকদিকে ওয়াল স্ট্রিটের বন্ধু মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনেও একই রকম ভুয়ো পছন্দের আবহ তৈরি করা হয়েছে—”আমাদের শহরের অর্থনৈতিক পরিবেশ ও স্বাধীনতা রক্ষা” হচ্ছে তার স্লোগান। কিন্তু এর মানে কী ছিল বাস্তবে? এর মানে ছিল জমির মালিকেরা মানুষ উচ্ছেদ করতে পারবে, NYPD যথেচ্ছ হিংসা চালাতে পারবে, আর রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো গরিবদের হঠিয়ে উচ্চবিত্তের পাড়া গড়ে তুলবে।
এই প্রেক্ষাপটে মামদানি সাহসী এবং বাস্তব কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি রাজনীতিকে কেবল ট্রাম্প-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে নৈতিক ক্ষোভে সীমাবদ্ধ রাখতে রাজি হননি। তিনি সোজাসুজি বলেছিলেন— মধ্যপন্থীউদারপন্থীরা শ্রমজীবী মানুষের যন্ত্রণা, অনিশ্চিত জীবন, আর গিগ ইকোনমির শোষণ নিয়ে কিছুই না করে চুপচাপ বসে থাকলে ডানপন্থী ফ্যাসিবাদমাথাচাড়া দিয়ে উঠবেই।
ধনীরা শেয়ার বাজার থেকে রেকর্ড মুনাফা তুলছে আর টিভিতে ‘অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে’ বলে নাচানাচি হচ্ছে -মামদানি এই ভাঁড়নাচের আড়ালে থাকা অন্ধকারকে তুলে ধরেছেন—উচ্ছেদ, চাকরির অনিশ্চয়তা আর রাইডার-ডেলিভারিম্যানদের দিন-রাতভর হাড়ভাঙা খাটুনি। উদারতার মুখোশ দিয়েএখন আর পুঁজিবাদের গলদ ঢাকা যাচ্ছে না,এটা মামদানির বিজয় দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে ।
মামদানি-র অভিযাত্রা ব্যক্তির বিজয় নয়—
সমস্ত ভেঙে পড়া পরিবার, বঞ্চিত শ্রমিক, অশ্বেতাঙ্গ মানুষ, অভিবাসী ও তরুণদের সম্মিলিত প্রতিবাদের প্রতিফলন হিসেবে ধরতে হবে। তারা নিজেদের কণ্ঠস্বর রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। তাঁরা জানেন, কেউ এসে তাঁদের হয়ে কিছু করবে না—রাজনীতি বদলাতে হলে নিজেদেরই ময়দানে নামতে হবে।
এবারকার প্রচারের ধরন ছিল একেবারে আলাদা। মামদানি-র টিম নির্বাচনী তহবিল তৈরি করেছিল ছোট ছোটঅনুদান থেকে,এক-একটি ব্লকে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের সমস্যা শুনে, তাঁদের ঘরভাঙার দুঃখ ও ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা শ্রদ্ধা নিয়ে গ্রহণ করে। কোনো কর্পোরেট চাঁদা বা ধামাধরা মিডিয়া প্রচারের আশ্রয় নয়—এই ছিল তাঁদের মন্ত্র।
পাড়ার দোকান, ভাঙাচোরা বিল্ডিং, মেট্রোর ধারে দাঁড়িয়ে মামদানি-র স্বেচ্ছাসেবকরা বলেছিলেন: “আপনার ভাড়া বেড়েছে, আপনার কাজ অনিশ্চিত, আপনার স্কুলে শিক্ষক নেই—আমরা আছি, আমরা শুনি, আমরা বদল আনতে এসেছি।”
সামান্য শব্দগুলোই হয়ে উঠেছিল আগুন।
‘রাজনীতি’ আর দূরের জিনিস নয়
মামদানি-র জয় আরও একটি বার্তা দিল—রাজনীতি শুধু স্যুট-পরা লোকদের ব্যাপার নয়, কোর্ট-কাচারিরবাইরে সাধারণ মানুষজনের মধ্যে রাজনীতি শুরু হয়। এই জয় একজন অভিবাসী সন্তানের, একজন মুসলমানের, একজন স্পষ্টভাষী সমাজতন্ত্রীর। মানুষকে সম্মান দেওয়ার অর্থ হল সবার আগে তাঁদের জীবনের বুনিয়াদি প্রয়োজন মেটানো,এটা মামদানি স্পষ্ট বলেছেন।
এধরনের ধারণা মূলধারার রাজনীতিতে ঢিল পড়ার জন্য যথেষ্ট । তাঁরা সেইসব প্রার্থী দেখে অভ্যস্ত যারা ভোট চাইবে ভয় দেখিয়ে,বিভাজন করে,অথবা ফাঁকা প্রতিশ্রুতি ছড়িয়ে। মামদানি সে ফাঁদে পা দেননি। তিনি রাজনীতিকে ফিরিয়ে এনেছেন তার ন্যায্য ব্যাখ্যায়– শ্রেণি-সংঘাতের প্রশ্নে, বঞ্চিতের পক্ষে দাঁড়ানো মানেই যেখানে ক্ষমতার বিরুদ্ধে যাওয়া।
আগামী দিনের সংগ্রাম
তবে এই জয় শুরু মাত্র। মামদানি নিজেও তা জানেন। ক্ষমতার কাঠামো এত সহজে বদলায় না। সিটি হল জয় করা মানেই এই নয় যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান এখনই মানুষের হাতে ফিরে আসবে। তবে এই জয়ের মূল শিক্ষা—সংগঠন থাকলে, মানুষ পাশে থাকলে, সম্পদ আর মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ না করেও ক্ষমতাবানদেরপরাজিত করা যায়।
সেদিক থেকে এটা এক অন্য যুগের সূচনা— রাজনীতি আবার মানুষ কেন্দ্রিক, যেখানে কোনো প্রার্থীকেসরাসরি প্রশ্ন করা যাবে।
মামদানি-র অবদান এটাই যে তিনি মানুষকে আবার বিশ্বাস করাতে পারলেন যে রাজনীতি মানুষের , সেটাই হওয়া উচিত, আর হবেও।
ব্যক্তির নয়, ইস্যুর বিজয়
জোহরান মামদানির বিজয়কে একজন ক্যারিশম্যাটিক প্রার্থীর জয় হিসেবে দেখলে এই রাজনৈতিক মুহূর্তের প্রকৃত তাৎপর্যকে উপেক্ষা করা হবে। উপর থেকে পরিচালিত কোন জাতি-ভিত্তিক নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রচার নয়, তৃণমূলে সংগঠিত এক লড়াইয়ে নিউ ইয়র্ক সিটি ডিএসএ, ভাড়াটে ইউনিয়ন, শ্রমিক পরিষদ এবং অভিবাসী সহায়তা গোষ্ঠীগুলি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল।
ব্রুকলিন থেকে ব্রঙ্কস পর্যন্ত সংগঠকেরা একেক জন মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলেছেন, রাজনীতির পাঠ দিয়েছেন। অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দিতে গেছেন। এই বিজয়ের পেছনে কোনও মার্কেটিং কৌশল ছিল না—ছিল সংগ্রামের ধারা, সাহসিকতা এবং সংগঠিত প্রচেষ্টা।
মামদানি বারবার বলেছেন, নির্বাচনই চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধুই জয় নয়, বরং এই শহরের ভবিষ্যতকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি করা।” তিনি অঙ্গীকার করেছেন, তিনি জনআন্দোলনের সঙ্গে মিলিতভাবে শাসন করবেন—তাদের ওপরে নয়।
ভবিষ্যত কর্মসূচি: গণআন্দোলনকে শক্তিশালী করা এবং অধিকারের লড়াই
মামদানির জয়কে কেন্দ্র করে সমাজতন্ত্রীরা যেন আত্মতুষ্টিতে না ভুগলেই ভাল। এই জয়কে বৃহত্তর অসমাপ্ত একটি লড়াইয়ের মুখবন্ধ হিসেবে দেখাটাই সমীচীন। সিটি হলে পৌঁছাতে পারলেও একজন সমাজতান্ত্রিকমেয়র হিসেবে মামদানিকে লড়তে হবে প্রশাসনিক জটিলতা, পুলিশ ইউনিয়ন, রিয়েল এস্টেট লবির দল এবং বিমুখ মিডিয়ার বিরুদ্ধে —মোদ্দাকথা শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ-বিরোধীদের বিরুদ্ধে ।
বামপন্থীদের অনেকে অবশ্য বলছেন, মামদানির পক্ষে গণসমর্থন বা ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থানের কারণে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে, তা বিপজ্জনক দিকও আছে। অতীতে সাক্ষী, এমন উত্তেজনায় পরিস্থিতিতে ভুল পথে পরিচালিত হয়ে অনেকেই হতাশ ও বিপথগামী হয়ে পড়েন—বিশেষত যখন তথাকথিত প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটরা শেষ পর্যন্ত জনগণের পক্ষে না দাঁড়িয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পক্ষেই যায়। সমাজতন্ত্রীদের উচিত, ডেমোক্র্যাট দল এবং তার ভেতরের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রতি সদা সন্দিহান ও সমালোচনামূলক মনোভাববজায় রাখা।
ডিএসএ বা অন্যান্য বাম সংগঠন যাই বলুক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কাঠামোগতভাবে জনসাধারণের দাবি বা প্রগতিশীল রাজনীতিকে স্বীকার করে না। বরং যারা এই দলটিকে ভেতর থেকে পাল্টাতে যায়, তারা একসময় নিজেরাই পাল্টে যায়—একজন আন্দোলনকর্মী থেকে শাসকের মুখপাত্র হয়ে ওঠে।
তবুও, বিপ্লবী আন্দোলনের এই শূণ্যতায়, যেসব প্রার্থী বামপন্থী রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নেন, তাঁদের সমালোচনামূলক সমর্থন জানানো উচিত। নিখুঁত পথ নয়, কিন্তু এই মুহূর্তে এটিই আমাদের হাতে থাকা সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
ব্যক্তি নয়, ধারণার জয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
এই বিজয়ের মূল প্রেরণা এসেছে সাধারণ মানুষের দৃঢ় সংকল্প থেকে—যাঁরা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের শ্রমবিরোধীনীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে চান। সমাজতন্ত্রীদের কাজ, এই আন্দোলনের গতি ধরে রেখে বৈচিত্র্যময়জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং শুধু নির্বাচনী রাজনীতি নয়, দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়া।
নির্বাচনের বাইরে শ্রমিক পরিষদ, ভাড়াটে সমিতির মতো কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যেগুলি ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারবে। আমাদের চাই এমন এক সমাজতান্ত্রিক কৌশল, যা কেবল নীতিগত প্রস্তাব নয়, বরং পুঁজিবাদী সমাজে মালিকানার স্বরূপটি পাল্টে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা বহন করে।
মামদানির চ্যালেঞ্জ হবে, বাস্তব সংস্কার কার্যকর করতে গিয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া এবং এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, যা নির্বাচনোত্তর চাপে বা দক্ষিণপন্থী আক্রমণের মুখেও টিকে থাকতে পারে।
২০২৫ সালে জোহরান মামদানির মেয়র হিসেবে জয় যুক্তরাষ্ট্রে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এটি ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের কর্পোরেট দ্বৈতশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং প্রমাণ করে যে শ্রেণিভিত্তিক রাজনীতিও এই পুঁজিবাদী কাঠামোর মধ্যেই ফলপ্রসূ হতে পারে।
ট্রাম্প “আমেরিকাকে বাঁচানোর” নামে ধনীদের এবং পুলিশ ইউনিয়নের স্বার্থ রক্ষা করছেন। মামদানি তুলে ধরছেন এক ভিন্ন ভবিষ্যৎ—যেখানে শহর গড়ে উঠবে শ্রমজীবী মানুষের হাতে, তাদের প্রয়োজনে।
পরিশিষ্ট
মামদানির সাম্প্রতিক নির্বাচনী জয় আমেরিকার বামপন্থার পক্ষে আশাব্যঞ্জক। একই সাথে জটিল কৌশলগত চ্যালেঞ্জও বটে। সমালোচকদের ইঙ্গিত যথার্থ –মামদানিকে “সমালোচনামূলক সমর্থন” কোনোভাবেই বাম সংস্কারবাদের সঙ্গে আপস না হয়ে ওঠে। শুধু ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ‘এন্ট্রিজম’-এর বিপদের কথা বললেই চলবে না; লড়াই সেই কাঠামোর বিরুদ্ধেও, এই পার্টি যা ব্যবহার ক’রে জনগণের র্যাডিকালআন্দোলনগুলোকে নিরস্ত করে। গণ-আন্দোলন—বিশেষত শ্রমজীবী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন—শেষ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক দিশাহীনতায় পর্যবসিত হয়েছে এমন উদাহরণই অধিক। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে সংগঠনগত স্বাধীনতা বজায় না রাখতে পারলে একজন সমাজতন্ত্রী যতই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোন না কেন, তিনি শেষপর্যন্ত শাসনযন্ত্রের ‘সেফটি-ভালভ’’ হয়ে উঠবেন।
আন্দোলনের জায়মান পর্যায়ে এই সমালোচনা আরও জরুরি । বৈপ্লবিক দায়িত্বের অর্থ —আন্দোলন ক্লান্ত হয়ে পড়ার অপেক্ষা না করা। কাজ শুরু করার সুবর্ণ সময় সূচিত হয় হাজার হাজার মানুষের রাজনীতিকরণেঅংশ নেওয়ার মধ্যে। আবাসনের অধিকার, শ্রমিকদের সংগ্রাম, কিংবা যুদ্ধবিরোধী প্রচেষ্টার মাধ্যমে। বিপ্লবী বিকল্পের সন্ধান করা দরকার, “সম্ভবের বামপন্থা” তত্ত্বে গিয়ে আত্মসমর্পণ না করার জোর আছে যার। মামদানির প্রচারাভিযান আশাব্যঞ্জক। ফলপ্রসু হতে গেলে নির্বাচনকেন্দ্রিকতার বাইরেও গণ-ভিত্তিক শক্তিশালী সংগঠন নির্মাণ প্রয়োজন ।
তাছাড়া, মামদানি নিজেই এখন এক অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতীক —একজন সমাজতন্ত্রী যখন নির্বাহী ক্ষমতায় থাকেন, তখন পুঁজিবাদের শাসনযন্ত্রের অংশ হবার ঝুঁকি তো এড়াতে পারেন না। যখন আবার ICE-এর (ইমিগ্রেশনপুলিশের) অভিযান শুরু হবে কিংবা ফেডারেল নির্দেশ অমান্য করে ফিলিস্তিন সংহতির বিক্ষোভ গড়ে উঠবে, তখন মামদানির নেতৃত্বাধীন NYPD কী করবে? তারা কি প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করবে, না তাদের ঘিরেফেলে দমন করবে? শুধু তাত্ত্বিক প্রশ্ন নয়, এটি বাস্তব রাজনৈতিক পরীক্ষার ক্ষেত্র। নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরজবাবদিহি করানোর মতো স্বতন্ত্র, সংগঠিত গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠলে তারা বাধ্য হবে ‘শৃঙ্খলা’ আর ‘ন্যায়’-এর মধ্যে বেছে নেওয়ার কঠিন খেলাটিতে নামতে। বামপন্থীদের প্রস্তুত থাকতে হবে—শুধু মামদানির পাশে থেকে লড়াই করার জন্য নয়, প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধেও দাঁড়ানোর জন্য।
লেখক ডানকান চ্যাপেলের কাছে কৃতজ্ঞ তাঁর পরামর্শের জন্য ।